সিরাজুল ইসলাম বিজয় 9 February 2021 , 10:46:30 প্রিন্ট সংস্করণ
সন্ধ্যা প্রায় পেরিয়ে গিয়েছিল সেদিন। অনেক উঁচু নিচু পথ শেষে তাঁদের আবাসে যখন পৌঁছালাম, তখনো আমার ফেরার তাড়া ছিলনা। শীত ছিল ঝাঁকানো। ব্যারাক-গৃহের বাইরে মাটির চুলোয় খড়ি দিয়ে রান্না হচ্ছিলো। খানিক আগুন পোহানোর পরে রান্নার খোঁজ নিলাম। সবাই উৎসুক ছিল, আমি কেন গিয়েছি! পরে ইউএনও এর গাড়িটা হতে যেই কম্বলগুলো বেরুলো, হই হই শুরু হলো। এইসব হঠাৎ উপহার পেতে কিম্বা দেখতে এঁরা অভ্যস্ত। আজকাল শীত এলেই কম্বল বিতরণ হয়। প্রচার হয়। প্রসারও। এঁরা হয়তো প্রচারটা দেখেছেন। তাই তাঁদের অদ্ভুত লাগে না। কিন্তু আমার অদ্ভুত লাগে। আমার পেছনে গাঢ় অন্ধকার। সামনে মাটির চুল্লীতে শীতের সবজি। অদূরে মেরুণ রংগের পুরোনো পাজেরো। ইউএনও সাহেবরা মূলত হোমওয়ার্ক ছাড়া কাজ করেন না। আমার হোমওয়ার্ক বলে, এই আবাসনে চল্লিশটি পরিবারের বসবাস। তাই সাথে থাকা কম্বলের সংখ্যাও চল্লিশ। বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা এই আবাসনের নন। তিনি আবাসনের পাশেই থাকেন। কম্বল দিচ্ছি জেনে এসেছেন। আমি খানিক ইতস্তত করলাম। পরক্ষণেই আমার সাথে থাকা বিতরণ বাহিনীকে বললাম, প্রতি গৃহে একটা করে দাও। যে ঘরে কেউ নেই, সেখানে দিও না। শেষে গোটা কয়েক সারপ্লাস হলো। তারই একটা আমি তাঁকে জড়িয়ে দিলাম। অতঃপর ছবি তুলিবার ‘হলো তার সাধ’। ক্লিক করার আগে তাঁকে একবার হাসতে রিকোয়েস্ট করলাম। তিনি হাসলেন না। আমাকে পুরোপুরি রিজেক্ট করে দিলেন। তাঁর অপারগতা আমি জানি। জানি তাঁর অপমানবোধ। আমি এই তুচ্ছ উপহার দেবার আগে তাঁকে অপেক্ষা করিয়েছি। সেই অপেক্ষার প্রহর তাঁর অহমকে আহত করেছে। চাইলেই কারো হাসি জিনে নেয়া যায় না। আমি তাঁকে ‘স্যরি’ বললাম। সেটিকেও তিনি উপেক্ষা করলেন। সারাটি পথ আমি ফোনের স্ক্রিনে তাঁর ছবি দেখলাম। তাঁর উপেক্ষায় ভরা চোখ। তাঁর নির্ভরতার লাঠি। তাঁর ছিন্ন বস্ত্র। দাতা দিলেন-গ্রহীতা গ্রহণ করলেন। কিন্তু দু’জনেই বোধ হয় জানেন, এখানে এসব কিছু ঘটেনি। হয়নি জীবনের লেন-দেন। গায়ে জড়ালেই কোন কিছু গ্রহণ করা হয়না।