বঙ্গ ডেস্কঃ 11 September 2020 , 10:59:35 প্রিন্ট সংস্করণ
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের সরকারী বাসভবনে ঢুকে ইউএনও এবং তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা ওমর আলী শেখ কে হাতুরি দিয়ে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় ২ আসামীর ৭ দিনের রিমান্ড শেষে জেল হাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
আজ শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ইউএনওর উপর হামলার ঘটনায় আসামী রংমিস্ত্রী নবিরুল ইসলাম (৩৫) এবং সান্টু চন্দ্র দাস (২৮) কে সাত দিনের রিমান্ড শেষে ডিবি পুলিশ আদালতে তুললে আদালত তাদের দুজন কে দিনাজপুর জেল হাজতে প্রেরণ করে। গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাব দুজন আসামীকে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ওই দিন বিকেলে ডিবি পুলিশ আসামী নবিরুল ও সান্টুকে আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমার বসু ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
অপর দিকে আরেক আসামী আসাদুল র্যাব হেফাজতে থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে আদালতে তুলে ডিবি পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে দিনাজপুরের অতিরিক্ত সিনিয়র জেলা জজ মনিরুজ্জামান সরকার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আসামী আসাদুলকে আগামীকাল আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন ডিবি পুলিশ। তবে ৭ দিন রিমান্ডে থাকাকালীন আসামী নবিরুল ও সান্টু কোন তথ্য দিয়েছে কিনা কিংবা ইউএনওর বাড়িতে ঢুকে ইউএনও এবং তার বাবাকে হাতুরি দিয়ে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে কিনা তা জানায়নি ডিবি পুলিশ।
দিনাজপুর কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসরাইল হোসেন জানান, আসামী নবিরুল ও সান্টুকে রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে নতুন করে কোন রিমান্ড বা জবানবন্দী রেকর্ডের আবেদন করা হয়নি।
এ দিকে দিনাজপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ মামলার তদন্ত ভার নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মচারী ও ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতা সহ ২০ জনকে আটক করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অধিকাংশ সন্দেহভাজন ব্যাক্তিকে ছেড়েও দিয়েছে ডিবি পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টার সময় ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের সরকারী বাসভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকা টয়লেটের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে একজন সন্ত্রাসী। এ সময় বড় হাতুরী দিয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের মাথার বাম পাশে বেশ কয়েকটি আঘাত করে রক্তাত্ব অবস্থায় এবং তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ঘটনার দিন সকালে ইউএনওর বাসভবনের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায় ২ জন সন্ত্রাসী ইউএনওর বাড়িতে প্রবেশ করেছিল। পরের দিন ভোরে র্যাব সন্দেহভাজন হিসেবে আসামী যুবলীগ নেতা আসাদুলকে হাকিমপুর (হিলি) সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করে। একই সময় পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমকে তার বাড়ি থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাবের হেফাজতে দিয়ে দেয়। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে র্যাব পালশা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাসুদ রানা, রংমিস্ত্রী নবিরুল ও সান্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রংপুর র্যাব-১৩ এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক রেজা আহম্মেদ ফেরদৌস জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসাদুল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে এবং তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে নবিরুল ও সান্টুকে আটক করা হয়েছে। অপর দিকে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুদ রানাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।