সারাদেশ

উলিপুরে দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

  আব্দুল মালেক 30 August 2020 , 4:50:19 প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রশাসন অভিযোগের তদন্ত করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে।

সদ্য বিদায়ী উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের স্বাক্ষরিত পত্রে (স্মারক নম্বর ০৫.৪৭.৪৯৯৪.০০০.০৫.০২৯.২০-৪৯৬) জানানো হয়, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হযরত আলীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন কতর্ৃক করা তদন্তে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ‘অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তদন্তকাজে সহযোগিতা করেননি, বরং তিনি পত্র মারফত জানিয়েছেন যে, সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে তদন্তকারীদের কাজ করার কোনও এখতিয়ার (উপজেলা প্রশাসনের) নেই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি প্রেরণ করেছেন।

অভিযোগকারী বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হযরত আলী জানান, গত বছরের অক্টোবর/১৯ইং মাসে ম্যানেজিং কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ কমিটি করে বিদ্যালয়ের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ করে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অনুকূলে সরকারি বরাদ্দ ও অভ্যন্তরীণ আয়ের প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ, বিদ্যালয় পরিচালনায় নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ মেলে। সেই প্রতিবেদন দিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম চাঁদকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হলেও তিনি কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। পরে বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ ও উন্নয়ন স্থবিরতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর অঞ্চল বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের একটি পুকুর ভরাট বাবদ সরকারের কাবিখা ও টিআর প্রকল্প থেকে বিদ্যালয়ের অনুকূলে প্রায় ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজ না করে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি। বাণিজ্যিক ঘর বরাদ্দ বাবদ ব্যবসায়ীর কাছে টাকা নিয়ে ওই পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের জায়গায় নির্মিত ৫৩টি বাণিজ্যিক ঘর বরাদ্দ বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছে জামানত হিসেবে এক কোটি পাঁচ লাখ ৯২ হাজার টাকা রশিদ মূলে নেওয়া হলেও নিরীক্ষণ কমিটির কাছে তার ব্যায়ের কোনও হিসাব দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক। মূলত প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি রায় ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম যোগসাজসে বিদ্যালয়ের এ টাকা আত্মসাত করেছেন।

উপজেলা প্রশাসনের তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে এবং পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিবেদনটি এখন জেলা প্রশাসকের দফতরে রয়েছে।

বিদ্যালয়টির অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার বলেন, ‘আমার ওপর আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। মূলত ফায়দা লোটার জন্য কমিটির একজন সদস্য এমন অভিযোগ করেছেন। উপজেলা প্রশাসন কতর্ৃক গঠিত কমিটি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে, এমন তথ্য জানালে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বহাল থাকাকালে এ ধরনের অভিযোগের তদন্ত তারা করতে পারেন না।

বিভিন্ন অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ থাকলেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি খোরশেদ আলম চাঁদ জানান, ‘ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে যে নিরীক্ষা কমিটি করা হয়েছে আমি তাদের প্রতিবেদন হাতে পাইনি। প্রতিবেদন হাতে পেলে এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রমাণ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। প্রতিবেদনটি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content

error: ছি ! ছি !! কপি করার চেষ্টা করবেন না ।