সারাদেশ

উলিপুরে সম্পূর্ণ সুস্থ্য-সবল স্বাবলম্বী লোকজনই পেয়েছে প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড

  আব্দুল মালেক 1 September 2020 , 10:54:17 প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে সম্পূর্ণ সুস্থ্য-সবল স্বাবলম্বী লোকজনই পেয়েছে প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড

কুড়িগ্রামের উলিপুরে সম্পূর্ণ শারীরিকভাবে সুস্থ্য-সবল ও স্বাবলম্বী পরিবারের লোকজনই পেয়েছে প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড। এসব কার্ড হওয়ার পিছনে জড়িত রয়েছেন সংশ্লিষ্ট অফিস, ডাক্তার, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এমন অভিনব প্রতারণার ঘটনাটি ঘটেছে, উলিপুর পৌরসভার নারিকেল বাড়ী সন্ন্যাসীতলা গ্রামে।

অভিযোগ রয়েছে, ৩ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলরের যোগসাজসে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে, ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে সুস্থ্য-সবল ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধি বানিয়ে ভাতার টাকা উত্তোলন করে সিংভাগ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সম্পূর্ণ শারীরিক সুস্থ্য থাকার পরেও কিভাবে প্রতিবন্ধি ভাতার আওতায় আসে, এ নিয়ে এলাকায় সর্বত্রই সমালোচনার ঝড় বইছে। এতে করে প্রকৃত প্রতিবন্ধিরা সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রতিবন্ধি ভাতা ভোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৯৫জন। পৌরসভায় চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিবন্ধি ভাতার আওতাভুক্ত হয়েছেন ৩০৫ জন। কিন্তু এরইমধ্যে প্রায় শতাধিক সুস্থ্য সবল ব্যক্তিকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিবন্ধি ভাতার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সরেজমিনে অনুসন্ধান করে এমন একাধিক ব্যক্তির তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হলে উপজেলায় শতশত এমন ভাতা ভোগির কার্ড বেড়িয়ে আসবে বলে সচেতন মহলের ধারণা।

নারিকেল বাড়ী সন্যাসীর তলা গ্রামের বাসিন্দা সর্বের্শ্বর চন্দ্র বর্মণ শারীরিকভাবে সম্পূর্ন সুস্থ্য, জমি-জমা সবই আছে। তিনি প্রতি বছর এক থেকে দেড়শ মণ ধান পান। কিন্তু হাটুতে সামান্য ব্যাথার কারণে ঠিকমত বসতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের ডাক্তারের কাছে গেলে দুর থেকে দেখে তাকে প্রতিবন্ধি হিসেবে শনাক্ত করা হয়। পরে ভাগ্নে ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি যোগেশ্বেরের মাধ্যমে প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড পান।

ওই গ্রামের প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মন (৭০) বয়সের ভারে কোমড়ে সামান্য ব্যাথা অনুভব করেন তিনি। বয়স্কভাতার জন্য কাগজপত্র দিলেও তার হয়েছে প্রতিবন্ধি ভাতা। প্রথম দফায় ৯ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ৯ হাজার টাকার সাড়ে ৪ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে তাকে। বাকি টাকা কে নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউন্সিলরের পুত্র ভাতা কার্ড করে দিয়েছে, তাই তাকে সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে হয়েছে।

একই গ্রামের দিনোবন্ধু চন্দ্র (৬৮) শারীরিকভাবে সম্পূর্ন সুস্থ্য। তবুও পেয়েছেন ভাতার কার্ড। স্ত্রী পাশুবালা শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়ার পরও তার ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড। দিনোবন্ধু চন্দ্র বলেন, তিনি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে কাগজপত্র দিয়েছিলেন। কিন্তু তার হয়েছে প্রতিবন্ধি ভাতা।

শুধু সর্বেশ্বর, দিনোবন্ধু কিংবা প্রফুল্ল চন্দ্রই নয় একই পন্থায় প্রতিবন্ধি ভাতার টাকা তুলেছেন, ওই গ্রামের সিদ্বেশ্বর চন্দ্র বর্মন, কানু চন্দ্র বর্মন, পূর্ব নাওডাঙ্গা গ্রামের ফজলুল হক, কাজল চন্দ্র রায়, বাকরের হাট বাদিয়ার পাড় গ্রামের মন্টু মিয়াসহ অনেকে।

এ বিষয়ে পৌসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর ইসলাম গুল্লু নিজেও অভিযোগ করে বলেন, আমার দেয়া তালিকা সমাজসেবা পরিবর্তন করে এসব লোককে ভাতা দিয়েছে। যোগেশ্বর টাকা নিলেও বিষয়টি সমাজসেবা কর্মকর্তা জানেন। তার মাধ্যমে এ কাজগুলো হয়েছে।

৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি যোগেশ্বর চন্দ্র টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার বলেন, আমি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কিছু নাম দেয়ার সুযোগ পেয়েছি। তাই তাদের নামগুলো দিয়েছি। এখন তাদের প্রতিবন্ধি ভাতা হওয়ার কথা নয়, কেন হলো তা জানিনা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতার্ ডা. সূভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, সমাজসেবা যাচাই বাছাই করে পাঠালে আমি প্রত্যয়ন দেই। তাদের শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার আছে কিনা বা করা হয় কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সামাজসেবা তো যাচাই করে পাঠায়।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মশিউর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধি নির্বাচনের পুরো কাজটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসকের। কারও আবেদন পেলে সরেজমিন দেখে চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়। এখানে একটি চক্র রয়েছে স্বীকার করে এ অফিসার বলেন, সম্প্রতি আমার স্বাক্ষর জাল করে কয়েকটি ফরম জমা দেয়া হলে, দেখার পর আমি সেগুলো আটকে দেই। তবে আমরা দেখব তারা প্রতিবন্ধি না হলে তাদের ভাতা বন্ধ করে দেয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মন্তব্য করতে রাজি না হলেও কোন অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

উপজেলা যাচাই-বাচাই কমিটির সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, আসলে অনেক প্রতিবন্ধিকে দেখে বোঝা যায়না। তারপরও এ রকম কাজ খুবই দু:খজনক। সরকার এ উপজেলায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধিদের শতভাগ ভাতা বাস্তবায়ন করা প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। এরমাঝে এরকম কাজ নিন্দনীয়।

আরও খবর

Sponsered content