বঙ্গ ডেস্ক 1 September 2020 , 11:01:10 প্রিন্ট সংস্করণ
আমারছ মেয়ে এক ছেলে,বড় ৫ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, ছোট মেয়ে প্রতিবন্ধি একমাত্র ছোট ছেলে ও প্রতিবন্ধি মেয়েকে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে ও ভিক্ষা করে কোন রকমে বেঁচে আছি।
কথাগুলো বলেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের নমির উদ্দিনের স্ত্রী ফজিলা বেগম। তিনি আরো বলেন, সরকারীভাবে আমার প্রতিবন্ধি মেয়ে নমিজা আক্তারের নামে প্রতিবন্ধি ভাতা হলেও এখন পর্যন্ত বই কিংবা ভাতার টাকা কোনটিই তিনি পাননি।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাহাগিলি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিবন্ধি ভাতার তালিকায় ৩১ নম্বর সিরিয়ালে নমিজা আক্তারের নাম রয়েছে। তাঁর ভাতা বহি নম্বর ২৮৫৪। বাহাগিলি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডে এরকম ভাতাভোগী সেকেন্দার আলী সিরিয়াল নম্বর ৩২, ভাতা বহি নম্বর ২৮৫৫ এবং ফেরজুল মিয়া সিরিয়াল নম্বর ২৯ ভাতা বহি নম্বর ২৮৫২। তাঁদের প্রতিবন্ধি ভাতার টাকাতো দুরের কথা এখনও ভাতার বইও হাতে পাননি তারা। ওই ইউনিয়নের ১.২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিতা মহিলা সদস্যর স্বামী রুবেল মিয়া তাদের স্বাক্ষর জাল করে সমাজসেবা অফিসের লোকজন এবং ব্যাংক কর্মকতার্র যোগসাজসে ভাতার টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৫৪০ জন প্রতিবন্ধিকে সরকার প্রদত্ত প্রতিবন্ধি ভাতাভোগীর আওতায় আনা হয়। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে প্রত্যেক ভাতাভোগী ৭৫০ টাকা মাসিক হারে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরের ভাতা বাবদ মোট ৯ হাজার করে টাকা পাবে। কিন্তু স্ব স্ব ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধিগণ সমাজসেবা অফিস এবং ব্যাংক কর্মকতার্দের সাথে যোগসাজস করে ভাতাভোগীদের না জানিয়ে ব্যাংক থেকে ভাতার টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেন।
গত শনিবার ও রবিবার উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের গিয়ে ভাতাভোগীদের সাথে কথা বলে একই চিত্র পাওয়া গেছে, চাঁদখানা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুস সালামের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক, ভাতা বহি নম্বর ৩০৬৪, হাসানুর রহমানের প্রতিবন্ধি মেয়ে রেশমি আক্তার বই নম্বর ৩০৬৫। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওহেদ আলীর মেয়ে চম্পা বেগম ভাতা বহি নম্বর ৩১০৮। দুই নম্বর ওয়ার্ডের নুর ইসলাম বই নম্বর ৩০৭২ তারা সকলেই বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যগণ তাদের ভাতার টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। এছাড়াও চাঁদখানা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অহেদ আলীর মেয়ে প্রতিবন্ধি মোছাঃ চাম্পা ভাতা বই নম্বর ৩১০৮ বলেন, চাঁদখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমানের ছেলে সানটু ভাতা উত্তোলন করে ৫ হাজার টাকা নিয়ে আমাকে ৪ হাজার টাকা দিয়েছেন।
এছাড়াও কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আশরাফুল মিয়ার মেয়ে বিউটি বেগম, খবির হোসেন, মাগুড়া ইউনিয়নের জুমমাপাড়া গ্রামের সেকেন্দা আলী, ছকমাল মিয়ার ছেলে জিল্লুর রহমান সহ শতাধিক প্রতিবন্ধির টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাহাগিলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান শাহ দুলু বলেন, যদি কোন ইউপি সদস্য কিংবা সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রতিবন্ধি ভাতার টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করে থাকে তাহলে অব্যশই তাদেরকে ভাতার টাকা ফিরৎ দিতে হবে। কোনভাবেই প্রতিবন্ধির টাকা আত্নসাৎ করতে দেয়া হবেনা।
চাঁদখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে কোন প্রতিবন্ধির কাছ থেকে একটি টাকাও গ্রহন করা হয়নি। কেউ এ ধরনের প্রমাণ দিতে পারবেনা। আপনারা পত্রিকায়ড় নিউজ করেন।
কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার আফজালুল হক চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন,ব্যাংক থেকে সরাসরি ভাতাভোগীদের হাতে ভাতার টাকা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকতার্( অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফরহাদ হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, প্রতিবন্ধির ভাতার টাকা যদি কেউ আত্নসাৎ করে থাকে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ রোকসানা বেগম বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।