বঙ্গ ডেস্ক 23 July 2020 , 8:18:34 প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারী নীতিমালা না মেনে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী সন্যাসীপাড়া আশ্রায়ন প্রকল্প সংলগ্ন চাড়ালকাটা নদী থেকে শ্যালোচালিত বোমা মেশিন দিয়ে প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাট করছে সংশ্লিষ্টরা। শ্রমিক দিয়ে কাজ করে প্রকল্প সংলগ্ন নদী থেকে বোমা মেশিনে মাটি ভরাটে প্রকল্প এলাকা হুমুকির মুখে পড়ছে।
অতি সম্প্রতি সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীটি খনন করায় গভীর হয়েছে। মাত্র ২০ ফুট দূরে এই প্রকল্প এলাকায় প্রতিদিন এক সাথে ৫ থেকে ৬টি বোমা মেশিনের সাহায্যে ৫.৭৭ একর নীচু জমি ভরাট করা হচ্ছে। প্রতি বছরেই বন্যার সময় ওই এলাকাটি ভেঙ্গে যায়। স্পর্শকাতর এমন স্থানে দূর থেকে মাটি না এনে বোমা মেশিনে মাটি ভরাট করলে প্রকল্প এলাকা হুমকির মুখে পড়ছে বলে ওই এলাকার আতাউর, শফিকুল, আলমগীর সহ অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প হতে ০৪ মার্চ ২০২০ ইং তারিখের স্মারক নং- ০৩.০২.০০০০.৭০৩.১৪.০৭৮.১৯-৫০ মূলে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাহাগিলী সন্যাসীপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটির কাজের জন্য ৩৫৪.৪০১ মে. টন গম অনুমোদিত হয়ে ১৮০.০০০ (এক শত আশি দশমিক শূন্য শূন্য শূন্য) মে. টন গম ছাড় দেন। বরাদ্দ আদেশে ০৪ (চার) নং ক্রমিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচীর পরিপত্র (ডিসেম্বর ২০১৪) অনুসরণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়।
কিন্তু এ পরিপত্র অনুযায়ী মাটির কাজ শ্রমিকদের দিয়ে করার কথা থাকলেও তা না করে নদী থেকে বড় বড় শ্যালো চালিত বোমা মেশিন দিয়ে বালু তুলে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। ফলে এক সময় ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে প্রস্তুতকৃত আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে। ফলে সরকারের মহৎ উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে পারে। এছাড়া শ্রমিক দিয়ে মাটির কাজ না করে বোমা মেশিন দিয়ে বালু তুলে মোটা অংকের অর্থ লোপাটের সুযোগ নিয়েছে প্রকল্প সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পরিপত্র অনুযায়ী এ কাজের সার্বিক তত্বাবধান ও বার বার প্রকল্প পরিদর্শনের কথা থাকলেও তিনি দায়সারাভাবে কাজটি দেখছেন বলেও জানা গেছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে- পাউবোর খনন করা নদীর বালু চারদিক স্তুপ আকারে পরে রয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে ট্রাকটরের সাহায্যে পরে থাকা স্তুপ বালু প্রকল্প এলাকায় নেয়া হবে।
প্রকল্প সভাপতি বাহাগিলী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান শাহ্’র কাছে মুঠোফোনে শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের বালু ভরাট না করে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিজে কোন উত্তর না দিয়ে স্থানীয় একজন ডিও ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলার কথা জানান। এছাড়া তার কাছে সম্প্রতি খননকৃত নদী থেকে বালু উত্তোলন করে প্রকল্পটি ভরাট করায় একটা সময় নদী ভাঙ্গণের কবলে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটি পড়ার আশংকা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু হাসনাত সরকার শ্যালোচালিত বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে জানান- আমি যতটুকু জানি জমির বিষয়ে সমস্যা থাকায় তা সমন্বয় করতে একটা অর্থ খরচ হয়েছে। এ কারণে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে তা সমন্বয় করতে পারে বলে তিনি মনে করছেন। পরিপত্র অনুযায়ী কাজ না হওয়ার বিষয়ে কথা বললে তিনি আরও জানান- আসলে প্রকল্পটির কাজ শ্রমিক দিয়ে করার নিয়ম। বিষয়টি আমি দেখছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানান- শ্যালো মেশিন দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পটির মাটি ভরাটের বিষয়টি আমার জানা নেই। সাধারণত নদী সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো হয়। পরিপত্র অনুযায়ী যাতে কাজটি হয় সে ব্যাপারে পিআইও সাহেবকে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছি।