সিরাজুল ইসলাম বিজয় 16 September 2020 , 9:18:39 প্রিন্ট সংস্করণ
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘ হচ্ছে নিবন্ধনহীন পশু চিকিৎসকদের মিছিল। সরকারি বিধি নিষেধকে তোয়াক্কা না করে উপজেলার সর্বত্র ভূয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাঁড়াশি অভিযান না থাকায় গ্রাম গ্রামান্তর জুড়ে হাতুড়ে পশু চিকিৎসকরা পশু চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন নিম্ন মানের রেজিস্ট্রেশনবিহীন কোম্পানীর ওষুধ বিক্রি করে লাখপতি বনে গেছেন অনেকেই।
সরেজমিন ঘুরে দেখাগেছে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও হাট-বাজার গুলিতে হাতুড়ে পশু চিকিৎসকের অনেকেই সাইনবোর্ড, প্যাড ও ভিজিটিং কার্ডে ডা. শব্দও ব্যবহার করে প্রাণী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইনের মারাত্মক লংঘন করছেন।
সূত্র জানায়, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে হাতুড়ে চিকিৎসকরা নিজেদের পেশাকে হালাল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রামগুলিতে নিবন্ধনহীন হাতুড়ে পশু চিকিৎসকদের অনেকেরই নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এস, এস, সি পাশের ও সার্টিফিকেট নেই। আর গ্রামের খামারীদের নিকট এসব ভূয়া চিকিৎসকরাই নামকরা ডাক্তার হিসেবে পরিচিত।
তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের দেয়া তথ্য মতে, উপজেলায় প্রায় ২শ এর অধিক নিবন্ধনহীন পশুচিকিৎসক রয়েছে। এসব চিকিৎসকরা ভেটেরিনারী কলেজ কিংবা সরকারিভারে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার সনদ ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
অনুসন্ধানে জানাযায়, গ্রাম কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব হাতুড়ে প্রাণী চিকিৎকরাই ভেটেরিনারী ঔষুধের দোকান গড়ে অনুমোদনহীন নিম্ন মানের ঔষধ বিক্রি করছে। এসব অবৈধ নিবন্ধনহীন পশুচিকিৎসদের বৈধতা নিয়ে সম্প্রপতি বাংলাশে ভেটেরিনারী কাউন্সিল কর্তৃক প্রাণী চিকিৎসা সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়েছে। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে নিবন্ধনহীন পশুচিকিৎসকদের চিকিৎসা কার্যক্রম দন্ডনীয় অপরাধ বলা হয়েছে। এবং দেখা মাত্রই তাঁদের আইনে সোপর্দ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সয়ার বুড়িহাট সর্দার পাড়া গ্রামের ভূয়া পশু চিকিৎসক মিলন সর্দারের কাছে ট্রেনিং বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একজন প্রাণী পল্লী চিকিৎসক। রংপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে আমি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চিকিৎসক। আমাদের সংগঠন আছে এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা আমার পকেটে কেউ আমার কিছুই করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আমার ট্রেনিং আছে কি না সেটা আমার কর্তৃপক্ষ ভালো জানেন, তারাই দেখ ভাল করবেন।
সয়ার কাংলাচরা গ্রামের ভূয়া চিকিৎসক মিলন চন্দ্র বলেন, আমি আমার মামা অবিনাশ চন্দ্র রায়ের সাথে ৮ বছর ঘুরে মানুষের ডাক্তারি শিখেছি এবং সেই সাথে প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে ট্রেনিং নিয়েছি। এখন বর্তমান সময়ে মানুষের ডাক্তারিত ইনকাম না থাকায় পশু চিকিৎসা এবং মাঝে মধ্যে মানুষের চিকিৎসাও দিয়ে থাকি।
পশু চিকিৎসক নুরুন্নবী বলেন, প্রাণী চিকিৎসার সব ধরনের ট্রেনিং আমার জানা আছে। আমি সকল রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। আমার বাবার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ এনে লাভ নেই। প্রায় ৩০ বছর থেকে আমার বাবা গবাদি পশুর চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। নুরুন্নবী ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, অন্যান্য প্রাণী পল্লী চিকিৎকেরা ভূল ভাল চিকিৎসা দিয়ে প্রায় গবাদি পশুর মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন। ওই গাভীটিকে পশু চিকিৎসক মজিবর রহমান চিকিৎসা দিয়েছেন। কোন ফলা ফল না হলে পরে আমার বাবা মুসা মিয়া ওই গাভীটির চিকিৎসা করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ ভেটেরিনারি সার্জন ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাগরিকা কার্জ্জী বলেন, পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে আমাদের তারাগঞ্জ উপজেলা। উপজেলার তুলনায় আমাদের জনবল কম। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে গ্রাম্য হাতুড়ে পশু চিকিৎসকরা। তবে প্রাণী চিকিৎসা দেয়ার যোগ্যতা ও আইনগত কোন বৈধতা তাঁদের নেই।