সারাদেশ

ত্রাণ চাই না, থাকার মত জায়গা চাই

  বঙ্গ ডেস্ক 23 July 2020 , 11:16:28 প্রিন্ট সংস্করণ

ত্রাণ চাই না, থাকার মত জায়গা চাই

ত্রাণ নয়, বাড়ি করি থাকার মত জায়গা চাই, থাকার জায়গা না থাকলে বাড়ি করে থাকমো কোটে আর ত্রাণ নিয়ে রান্না বা করি কোটে খামো। এভাবে কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহ গ্রামের তিস্তায় ভাঙনে বিলীন হওয়া মিটু মিয়া।
মিটুর মত ওই গ্রামের এজাজুল মুন্সি, হালিম, তালেব, জয়নাল, নুর আলম, হয়রত, সিরাজুল, হাসান, দুলু, দুলাল, খরকু, নুর ইসলাম, ছমসেল, লাবলু, খোকা, মনোয়ারুল, জয়নাল, বাবলু, রশিদ, নুর আলম, আক্তারুলসহ প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার তিস্তার কয়েক দফায় ভাঙনে বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। এখন শুধু মানচিত্রে নাম আছে শংকরদহ, কিন্তু বাস্তবে গ্রামটি আর নেই। আর ৭০-৮০টি বাড়ি গ্রামটির ভেঙে যাওয়ার পথে।
বর্তমানে নামে আর আর মুখে ওই কটি বাড়ি শংকরদহ স্মৃতি ধরে আছে। তিস্তা যেভাবে ভাঙছে তাতে যে কোন সময় সে বাড়িগুলো বিলীন হয়ে শংকরদহ পুরো গ্রাম হারিয়ে যাবে। এরেই মধ্যে শংকরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেছে। বিলীনের অপেক্ষায় শংকরদহ বধ্যভূমি ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা।
এবারের বর্ষা মৌসুমে দফায় দফায় বন্যা আর বন্যার পানি কমানোর সাথে তিস্তার ভাঙন। তিস্তার ভাঙনে উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহ, ইচলী, আশ্রয় গ্রাম, বাগেরহাট, চল্লিশসাল, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, চিলাখাল, খলাইচর, নোহালী ইউনিয়নের ফোটামারী, বৈরাতী, নোহালীর চর, আলমবিদিতর ইউনিয়নের গাটুপাড়া, হাজীপাড়া, পীরপাড়া, গজঘন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, কামদেব, রাজবল্লভ, মহিষাশুর, মর্ণেয়া ইউনিয়নের তালপট্টি, ভাঙাগড়া, আলালচর, নরসিং, আলেমার বাজারসহ তিস্তাবেষ্ঠিত বিভিন্ন এলাকায় তিস্তার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ফসলি জমিসহ ওইসব মানুষের ঘরবাড়ি, গাছপালা, রাস্তা ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে গেছে। চরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মানুষজন নৌকায় কোন রকম চলাচল করছে। বাড়ি ভাঙা মানুষগুলো কোন রকম এক-দুটা ঘর ও কিছু জিনিষপত্র সরিয়ে নিলেও তাদের বাড়ি নির্মাণ করে থাকার মত জায়গা না পেয়ে এসব ঘর রাস্তার ধারে ফেলে রেখেছে।
আবার অনেকে জায়গা না পেয়ে তিস্তার আরেক চরে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বাড়ি তৈরি করছে। সরকারিভাবে বাড়ি ভাঙা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলে কোন বাড়ি ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার এখন পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি। তবে কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু ও লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী তিস্তার ভাঙন কবলিত মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। তারা দিনরাত ওইসব মানুষের পাশে থেকে নৌকা যোগে তাদের দ্বারে দ্বারে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা প্রদান করছেন।
এদিকে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগের মাধ্যমে ভাঙন কবলিত এলাকায় কাজ করছে। জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম সম্প্রতি তিস্তার বন্যা ও ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সরকারিভাবে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। ইউপি সদস্য আব্দুল মোন্নাফ জানান, আর ৭০টি বাড়ি ভাঙনে তার শংকরদহ ওয়ার্ডটি নামে থাকবে বাস্তবে থাকবে না। ভাঙন রোধ করা না গেলে কিছুদিনের মধ্যে ইচলীও বিলীন হয়ে যাবে।
কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, তার ইউনিয়নে তিস্তার ১৫ পরিবারের বাড়ি ঘর ভেঙে গেছে। লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল হাদী জানান, এবারে তিস্তার ভাঙনে তার ইউনিয়নের ৩’শর অধিক পরিবার নদীগর্ভে সর্বশান্ত হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, ভাঙন রোধে জিও ব্যাগের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রুহুল আমিন বলেন, বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা আসলে দেওয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content

error: ছি ! ছি !! কপি করার চেষ্টা করবেন না ।