সারাদেশ

নীলফামারীতে ভূয়া আইডিতে ফেসবুক প্রেম-অতপর অপহরণ

  মোঃ রাব্বি ইসলাম আব্দুল্লাহ 24 August 2020 , 9:34:28 প্রিন্ট সংস্করণ

নীলফামারীতে ভূয়া আইডিতে ফেসবুক প্রেম-অতপর অপহরণ

মেয়েটি এবার এসএসসি পাস করেছে। কলেজে ভর্তির অপেক্ষায়। এই অল্প বয়সেই তার জীবনে এমন গল্প তৈরি হবে, যা নাটকীয়তায় ভরা কোনো সিনেমার কাহিনিকেও হার মানায়। ফেসবুকে ভুয়া আইডির এক ছেলের সঙ্গে প্রেম হয় মেয়েটির। একটানা দেড় বছর কথা হয় ফেসবুকে। হঠাৎ মেয়েটি নিখোঁজ। অভিভাবকরা ছুটে এলো থানায়। লিখিত অভিযোগ পেয়ে নীলফামারী থানা পুলিশ টানা চারদিন অভিযান চালিয়ে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মেয়েটিকে গতকাল রবিবার (২৩ আগষ্ট/২০২০) সন্ধ্যায় উদ্ধার করতে সক্ষম হলো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা হতে মেয়েটিকে উদ্ধারে সক্ষম হয়। তবে অপহরনকারী ভুয়া ফেসবুকে দেয়া সেই সুদর্শন ছবির ছেলেটি সহ তার বাহিনীকে ধতে পারেনি। তারা পালিয়ে গেছে।

এদিকে আজ সোমবার(২৪ আগষ্ট/২০২০) মেয়েটিকে নীলফামারী নিয়ে এসে ডাক্তারী পরীক্ষা করানো হয়েছে। মেয়েটি জানায় মিথ্যে প্রলোভনে পড়ে তার সুন্দর জীবনটি কলঙ্কে কালি লেপন করে দিয়েছে প্রতারকরা।

মেয়েটি আরো জানায়, ফেসবুকে যার সঙ্গে প্রেম, প্রোফাইলে যে ছবি, তার সঙ্গে বাস্তবে দেখা ছেলেটির কোনো মিল নেই। সামির নামের যে ফেসবুকের ছেলেটির সঙ্গে প্রেম, আসলে সে কে সেটি মেয়েটি বলতে পারেনি। প্রতারক অপহরনকারীরা তাকে ফাদে ফেলে জীবনের বড় সম্পদটি নস্ট করে দিয়েছে। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা থানার মামলা করেছেন।

নীলফামারীর পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান(বিপিএম,পিপিএম) ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে সদর থানার ওসি কে.এম আজমিরুজ্জামান ও পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মাহমুদ-উন নবীকে অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধারের নিমিত্তে একটি চৌকস টিম গঠনের নির্দেশ দেন। সে মাফিক পুলিশের চৌকস টিমটি প্রাথমিকভাবে ভিকটিমের বন্ধু/বান্ধব সহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের উপর নজরদারী করা সহ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা নেয় মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য।

তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায়, ফেসবুকে ভূয়া আইডিতে পরিচয়ের সুবাদে বিভিন্ন প্রলোভনের দ্বারা অজ্ঞাত অপহরনকারীরা কৌশলে একটি অজ্ঞাত প্রাইভেট কারে তুলে মেযেটি অপহরন করে নিয়ে গেছে। অভিযান পরিচালনা করা হয় নীলফামারী জেলার সম্ভাব্য স্থানসমুহে। পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, টঙ্গী সহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অপহরন কারিরা মেয়েটিকে নিয়ে ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করায় এক সময় মেয়েটিকে উদ্ধার করা দুরূহ হয়ে পড়লেও হাল ছাড়েনি নীলফামারী থানা পুলিশ।

একটানা ৯ দিন অভিযান পরিচালনা করে অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া কসবায় গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। তবে অপহরনকারীরা পালিয়ে যায়। উদ্ধার অভিযানে নীলফামারী থানার এসআই শাহারুল ইসলাম ও তার সঙ্গীয় সদস্যদের এ জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করতে হয়েছিল।

ভুয়া ফেসবুকের আইডিতে অপহরনকারী ও নারী পাচারকারীরা কত সক্রিয় তা মেয়েটি এখন নিজেই বলছে। বাড়ি থেকে প্রেমের টানে ভুয়া ফেসবুকের সেই ছেলেটি তার ইজ্জত সহ ছিনিয়ে নিয়েছে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া সোনা দানা ও টাকা পয়সা। তাকে অচেতন করে রাখা হতো শুধু বুক চাপড়াচ্ছিল মেয়েটি। বলছিল নীলফামারী থানা পুলিশের মাধ্যমে সে উদ্ধার হয়ে আরেকটি নতুন জীবন ফিরে পেল।

নীলফামারী পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান(বিপিএম,পিপিএম) বলেন, মেয়েটি ফেসবুকে প্রতারণার শিকার হয়েছে বটে। একই সঙ্গে পুলিশ সুপার জানিয়ে দিল আর কোনো মেয়ে যাতে নীলফামারীর এই মেয়েটির মতো ফেসবুকে প্রতারণার শিকার না হয়, সেদিকে সকলকে সজাগ হতে হবে। বেশি করে অভিভাবকদের। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ভুয়া ফেসবুকের সেই ছেলেটিকে চিহিৃত করে গ্রেফতারে।

আরও খবর

Sponsered content

error: ছি ! ছি !! কপি করার চেষ্টা করবেন না ।