বঙ্গ ডেস্ক 25 July 2020 , 12:28:11 প্রিন্ট সংস্করণ
বৈশ্বিক করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে প্রায় সবকিছু থমকে গেলেও বসে নেই ধানের জেলা দিনাজপুরের ৪ লাখ ৮০ হাজার কৃষক পরিবার। বোরো ধান ও ভুট্টা আবাদের পর এখন আমন আবাদ নিয়ে ব্যস্ত তারা। বীজতলা তৈরীর পর ইতিমধ্যেই আমন ধান রোপন করতে শুরু করেছেন ধানের জেলার এই কৃষকরা। আর ধান আবাদ করে বেশ ক’বছর ধরেই লোকসান গোনার পর এবার দাম ভালো থাকায় বোরো ধান আবাদ করে লাভবান হওয়ায় বেশ উৎসাহের সাথেই আমন আবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা।
করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেরই কাজ না থাকায়, আবার অনেকেই বেকার জীবন যাপন করলেও দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা আমন আবাদ নিয়ে ব্যস্থ হয়ে পড়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু একপ্রকার থমকে গেলেও গ্রামাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, যেনো এমন কোন পরিস্থিতিই নেই। স্বাভাবিক ভাবেই তারা তাদের কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত। কেউ ব্যস্ত আমন বীজতলা তৈরী নিয়ে, আবার কেউ ব্যস্ত আমন চারা রোপন নিয়ে।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সফল কৃষক মতিউর রহমান তার জমিতে শুরু করেছে ব্রি-৪৯ জাতের ধান রোপন। তার সাথে কথা হতেই তিনি জানালেন, “করোনা পরিস্থিতিতে বসি থাকিলে হামাক তো কাহো চালাবে নায়, হামার সংসার হামাক নিজেকেই চালাবা হবে, আর হামার খাবার হামাক নিজেকেই যোগাবা হবে। আর হামেরা কৃষকরা বসি থাকিলে হামেরা চলিবো কেমন করি, আর দেশও কেমন করি চলিবে। ঘরত খাবার থাকিলে অন্য কিছু না থাকিলেও চলিবে। খাবারটাই আসল। তাই সবাই বসি থাকিলেও হামাক বসি থাকিলে চলিবে নায়”। তিনি জানান, বোরো আবাদের পর ৬০ একর জমিতে আমন আবাদের পরিকল্পনা করেছেন তিনি। আর এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার থেকে রোপন শুরু করে দিয়েছেন।
শুধু মতিউর রহমান নয়, দিনাজপুর জেলার ৪ লাখ ৮০ হাজার ৮’শ কৃষক পরিবার করোনা মহামারী পরিস্থিতিতেও বোরো আবাদের পর এখন আমন আবাদ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
দিনাজপুর সদর উপজেলার নশিপুর গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, ধান আবাদ করে বেশ কয়েক বছর ধরেই লোকসান গোনার পর এবার ভালো দাম থাকায় বারো ধান আবাদ করে তারা বেশ লাভবান হয়েছেন। ফসল আবাদ করে এভাবে ন্যায্য দাম পেলে তারাও লাভবান হবে এবং দেশও খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে না বলে জানান তিনি।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক ইঞ্চি জমি ফাঁকা না রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে গতবছরের তুলনায় দিনাজপুরে এবার বেশী পরিমান জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দিনাজপুর জেলায় গতবছর ২ লাখ ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হলেও এবার ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে জেলায় ১৩ হাজার ৬’শ হেক্টর জমিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। এই বীজতলা দিয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার জমিতে আমন রোপন করা যাবে। বন্যার আশংকায় বেশী পরিমান বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই দিনাজপুর জেলায় আমন রোপন শুরু করেছে কৃষকরা। এ পর্যন্ত মোট লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ জমিতে আমন রোপন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল জানান, কৃষকরা এবার বোরো ধানের দাম ভালো পাওয়ায় আমন আবাদে আরও বেশী উৎসাহিত হয়েছেন।