সারাদেশ

রাজারহাটে দিন যায় দাম বাড়ে চালসহ নিত্যপণ্যের

  বঙ্গ ডেস্ক 21 September 2020 , 7:52:04 প্রিন্ট সংস্করণ

রাজারহাটে দিন যায় দাম বাড়ে চালসহ নিত্যপণ্যের

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বন্যা আর মহামারীর সঙ্কটের মধ্যে চালহসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন অজুহাতে মিলার মালিকদের চালের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বহুল আলোচিত। চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে মিলারদের কারসাজি।

মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর ফলে স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। এর চাপ পড়ছে খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষের ওপর।

সরেজমিনে জানা যায়, রাজারহাট উপজেলার সদর বাজারে সোমবার সকালে চালের বস্তায় (৫০ কেজি) অন্তত চারশত থেকে পাঁচশত টাকা বেড়েছে। প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। বর্তমানে মিনিকেট বস্তা (৫০কেজি) ৩০০০ টাকা থেকে ৩১০০, নাজির (৫০কেজি) ২৭৫০ টাকা থেকে ২৮০০, পাইজাম ও কাটারি (৫০কেজি) ২৩০০, বিআর আটাশ (৫০কেজি) ২২৫০ টাকা থেকে ২৩৫০ টাকা এবং মোটা স্বর্ণ (৫০কেজি) ২০০০ টাকা থেকে ২১০০ বিক্রি করছে খুচরা চাল বিক্রেতারা। অথচ এক সপ্তাহ আগে মিল মালিকরা চাল পাইকারী বিক্রি করেছে মিনিকেট ৫০, নাজির ৪৫, পাইজাম ও কাটারি ৪০, বিআর আটাশ ৩৮ এবং মোটা স্বর্ণ ৩৩ টাকা কেজি দরে।

রাজারহাটে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব শ্রেণীর মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বর্তমানে উপজেলায় করোনা কোভিক-১৯ এর কারণে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ এমনিতেই পরিবারের সব ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন এবং দরিদ্র পরিবারেরা ঋণ করে ব্যয় মেটাতে বাধ্য হচ্ছেন।

রাজারহাট সদর বাজারের চালের খুচরা- পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল হাকিম বলেন, আগস্টের শুরু থেকেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দাম বাড়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন যে বাড়ছে তা আমি জানি না। এবার তো ধানের ফলন ভালোই হয়েছিল। সরকার আমদানির সুযোগ দিয়েছে বলে শুনেছি, কিন্তু বাজারে এখন পর্যন্ত কোনো আমদানি করা চাল আসেনি। চালের দাম বাড়ার পাশাপাশি পাইকারি বাজারে বেচা-কেনাও কমে গেছে বলে মনে করেন চাল বিক্রেতারা। তাদের এমন ভাবনার মিল পাওয়া গেল চাল বাজারের টি -ষ্টোলের আমিনুরের কথায়। আমিনুর ইসলাম বলেন চালের দাম সপ্তাহে সপ্তাহে বাড়ছে। চালের দাম বাজারে কোনো স্থিতিশীলতা নেই। তাই আমি চাল কম করে কিনছি।

তবে সঙ্কটকালীন এই সময়ে সুগন্ধি চালের দাম বেশ খানিকটা কমে এসেছে। ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দামও বাড়াতে হচ্ছে বলে মিল- মালিকরা দাবি করছেন। বর্তমানে বাজারে ধান প্রতি মণ ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ধান ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী।

অপরদিকে, চালের পাশাপাশি সবজির দামও গত তিন সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে গত দুই দিন ধরে সরবরাহ কমে যাওয়ায় কাঁচা মরিচ ও পিয়াজের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। রাজারহাট সদর বাজারের সবজি বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া বলেন, কাঁচা মরিচের সরবরাহ খুব কম, দামও বেড়ে গেছে। এখন প্রতি কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ভালো মানের মরিচ কেউ কেউ ২০০ টাকায়ও বিক্রি করছেন। এছাড়া বেগুন ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, আলু ৩৫ টাকা,পেঁপে ৩৫ টাকা,মূলা ৪০,মিষ্টি কুমড়া ৩৫, কচুরবই ৪০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পানিকচু প্রতি পিচ ২৫-৩০, লাউ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। বাজারে হাঁসের ডিমের দাম হালা প্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির ডিম হালি ৩৫, লেয়ার ও কক মুরগীর ডিম হালি ৬৫ এবং দেশি মুরগির ডিমের হালি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মাছ ও মাংসের দাম বেশ খানিকটা কমে এসেছে।

 

এভাবে যদি দিনে দিনে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়, তাহলে সীমিত ও দরিদ্র পরিবারে কী দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় তা সহজেই অনুমান করা যায়। এ দুর্ভোগ দীর্ঘ সময় চললে এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে, অনেক পরিবারের শিশুদের শিক্ষাজীবনের অবসান ঘটে। কাজেই চালসহ নিত্যপণ্যের বাজারে যেন অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিবে, এটাই কাম্য।

আরও খবর

Sponsered content