আমিরুল কবির সুজন, মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি 16 September 2020 , 11:31:35 প্রিন্ট সংস্করণ
শতভাগ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে মিঠাপুকুর। গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বদলে গেছে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলা। প্রধান মন্ত্রীর উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষে ২০১৮ সালে স্থানীয় সাংসদ এইচ.এন. আশিকুর রহমান আলোর ফেরিওয়ালা নামক বিদ্যুৎ সংযোগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতায় মুজিব বর্ষে শতভাগ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে মিঠাপুকুর।
উপজেলার শঠিবাড়ি নামক স্থানে অবস্থিত রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ৬টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মাধ্যমে ৬০ এমভিএ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ২০২০ সালে মুজিব বর্ষে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সংখ্যা ১২টিতে উন্নীত হয়ে ১৪৫ এমভিএ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন করা হচ্ছে। রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতায় মিঠাপুকুর উপজেলায় মোট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫লক্ষ ১০ হাজার। ২০১৫ সালে গ্রাহক সংখ্যা ছিল মাত্র ১ লক্ষ ৩১ হাজার। গত ৪ বছরে গ্রাহক সংখ্যা বেঁড়ে হয়েছে ৫লক্ষ ১০ হাজার। এ উপজেলায় নতুন করে ৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করায় এটি এখন আলো-ঝলমলে আলোকিত মিঠাপুকুর। গ্রাহকের দোরগোড়ায় গিয়ে স্পট মিটারিং কার্যক্রমের মাধ্যমে মুজিব শতবর্ষে মিঠাপুকুর উপজেলা শতভাগ বিদুৎতায়ন ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে শতভাগ বিদ্যৎতায়িত ডিজিটাল ব্যানার। নতুন রুপে সেজেছে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কার্যালয়। চালু করা হয়েছে মুজিব কর্নার, এখানে বিভিন্ন বই ও ডকুমেন্টারী প্রদর্শনের মাধ্যমে গ্রাহকদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর জীবনী তুলে ধরা হচ্ছে। গ্রাহক সেবা নিশিত করতে চালু করা হয়েছে নন স্টপ সার্ভিস।
রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার নুরুর রহমান বলেন, এ সমিতির আওতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরিবিচ্ছিন্ন রাখতে কর্মীদের বিভিন্ন টিমে ভাগ করে দুর্যোগের সময়ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখা হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরেও আমরা সকলে মিলে করোনাকে ভুলে গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ অব্যাহত রেখেছি। সঠিক পরিকল্পনা আর কর্মীদের আন্তরিকতার কারণে মুজিব বর্ষে শতভাগ বিদ্যুৎতায়িত উপজেলা হিসেবে মিঠাপুকুরে নিরিবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও গ্রাহকদের যে কোন সমস্যা দ্রুত সমাধান করার কথা বলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আলোকিত মিঠাপুকুর গড়ে উঠার প্রত্যাশা ব্যাক্ত করে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মিঠাপুকুর উপজেলায় মাত্র ৪ বছর আগেও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বেশির ভাগ গ্রামের ঘরে ঘরে জ্বলত সাঁঝবাতি। ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বৃহত্তম এ উপজেলা মিঠাপুকুরের অধিকাংশ এলাকা ছিল বিদ্যুতায়নের বাইরে। মাঠের পর মাঠে কৃষকের জমির উপরে দেখা যেত বিদ্যুতের খুঁটির পর খুঁটি। তবুও অনেক গ্রামেই ছিল না বিদ্যুৎ। কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও কৃষকরা ছিল পিছিয়ে। মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্মভুমি মিঠাপুকুর উপজেলার জনপদের অধিবাসীদের ছিল নানা অভিযোগ আর আক্ষেপ। বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ থাকলেও লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ভোগ করতেন গ্রাহকরা। এখন এই উপজেলার জনপদের চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে। এ উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন থাকার ফলে এখন শতভাগ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত মিঠাপুকুর। এখন এ উপজেলার বাসিন্দারা লোডশেডিং কী জানেন না বললেই চলে। শুধু খুঁটির দিকে তাকিয়ে বিদ্যুতের আশায় এখন আর দিন কাটান না এখানকার মানুষ। গ্রাম ও ইউনিয়নে সীমাবদ্ধ নেই এ অঞ্চলের সংজ্ঞা। ইতিমধ্যে উপজেলার বেশকিছু এলাকায় ছোট-বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার ফলে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একসময় কৃষি এখানকার অধিকাংশ মানুষের প্রাণশক্তি থাকলেও বর্তমানে এ জনপদ কৃষি-শিল্প-বাণিজ্যে রূপান্তর হয়েছে। বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম ও মাটি বিহীন কৃষি চারা উৎপাদন হচ্ছে এ উপজেলায়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পল্লীর অনন্য সংমিশ্রণে এখন উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় মিঠাপুকুর। আধুনিক সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে পিছিয়ে নেই এ অঞ্চলের জনপদ। বিদ্যুতের আলোয় শুধু একটি জনপদ নয়। এখানকার আর্থসামাজিক অবস্থাও পরিবর্তিত হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও শিল্পের যে প্রসার ঘটেছে তা অবশ্য এক দিনে আসেনি। যুগোপযোগী পদক্ষেপ এ অঞ্চলের রূপ বদলে দিয়েছে। চাওয়ামাত্র এক দিনেই এ জনপদে মিলছে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ। এখন আর দিনের পর দিন, মাসের পর মাস টেবিলে ফাইল জমে থাকার কোনো নজির নেই। উপজেলার প্রত্যেক এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা গেছে।
বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে নুতুন প্রজন্ম। যে প্রজন্ম দেখবে না অন্ধকার। সেই অন্ধকারকে পেছনে ফেলে আলোয় আলোকিত হয়ে উন্নয়নের পথযাত্রী মিথ এখানকার আর্থসামাজিক অবস্থাও মিঠাপুকুরের জনপদ।