সারাদেশ

সৈয়দপুরে ভুয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার শিকার মাদ্রাসা ছাত্র

  ওয়াহেদ সরকার, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ 21 September 2020 , 7:07:02 প্রিন্ট সংস্করণ

সৈয়দপুরে ভুয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার শিকার মাদ্রাসা ছাত্র

নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে কলাহাটিতে সার্জারী বিশেষজ্ঞ না হয়েও এক ভুয়া ডাক্তার মোঃ ফিরোজ আলম সার্জারী অপারেশন করছে ৷ তার ভুল চিকিত্সায় প্রানহানীর শঙ্কায় মাদ্রাসা ছাত্র ৷

জানা যায়, বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নের বিমানবন্দর পশ্চিমপাড়ার মোজাহারুলের পুত্র কওমি মাদ্রাসা ছাত্র মোঃ মোরসালিন (১৯) গত ১১ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিছানায় শোয়ার সময় ডান হাতের কবজির নিচে মাংসপেশীতে সুঁই ঢুকে ভেঙ্গে যায় ৷ বাসায় চেষ্টার পরও ভেঙ্গে যাওয়া সুঁই বের করা সম্ভব না হলে ঐ দিনেই তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে রংপুরে চিকিত্সার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন ৷ ঐ দিন রাত হওয়ায় বাড়ি ফেরার পথে জনৈক লোকের পরামর্শে শহরের পাঁচমাথা মোড় কলাহাটির সালাম মার্কেটের ডাঃ মাসুম চিকিত্সালয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানে ডাঃ মাসুমের পুত্র ভুয়া ডাক্তার মোঃ ফিরোজ আলম অল্প টাকা খরচের প্রলোভন দেখিয়ে ভাঙ্গা সুঁই বের করার জন্য চেম্বারেই অস্ত্রপচার চালান ৷ অনেক কাটাছেড়া করার পরও ভাঙ্গা সুঁই বের করতে পারেন নি ৷ কৌশল করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য চিকিত্সা ক্ষেত্রে ব্যবহূত ক্যানুলা সুঁইয়ের ভাঙ্গা অংশ এনে রোগীর পরিবারের লোকজনদের হাতে তুলে দেন ৷ তিনি বলেন, হাত থেকে সুঁই বের করা হয়েছে, কোন চিন্তার কারন নাই ৷ পরিবারের লোকজনদের সন্দেহ হলে তাকে বারবার জানান হয়, এটি সুঁইয়ের ভাঙ্গা অংশ নয় ৷ সকলের কথা উপেক্ষা করে তিনি বলেন, এটাই সুঁইয়ের ভাঙ্গা অংশ আর সুঁই হাতে থাকলেও ড্রেসিংয়ের সময় বের হয়ে যাবে ৷ এরপর কাটাছেড়া অংশ সেলাই করে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করে রোগিকে বিদায় দেন ৷ পরবর্তীতে হাতে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হলে এক্স-রে রিপোর্ট করার জন্য রংপুরের সিটি ল্যাব এন্ড কনসাল্টেশন সেন্টারে নিয়া যাওয়া হয় ৷ পরে এক্স-রে রিপোর্টে হাতের মাংসপেশীতে ভাঙ্গা সুঁইয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় ৷ পরবর্তীতে তাকে রংপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ সেখানে কর্তব্যরত চিকিত্সক পুনরায় অস্ত্রপচার করে ভাঙ্গা সুঁই বের করেন ৷

রংপুর মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা সৈয়দপুরের ঐ ভুয়া চিকিত্সকের ব্যর্থতার কথা জানান এবং মৌখিকভাবে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন ৷ পরবর্তীতে মোরসালিনের পরিবারের লোকজন গত শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ডাঃ মাসুম চিকিত্সালয়ে যান ৷ সেখানে তারা ভুল চিকিত্সা ও মোরসালিনের জীবনের ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানান ৷ একপর্যায়ে রোগীর পরিবারের লোকজনদের সাথে ভুয়া ডাক্তার ও তার অনুসারীদের মধ্যে বাক বিতন্ডা শুরু হয় ৷ ঘটনাটি জানাজানি হলে উপস্থিত লোকজন ভুল চিকিত্সার জন্য ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী তুলেন ৷

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে স্থানীয় কাউন্সিলর হায়দার কাজী, কলাহাটির আড়ত্দার হাজী মোজাম্মেল হক ও জনৈক পিটু বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উভয়পক্ষকে আড়তে বসান ৷ বহিরাগতদের বের করে দিয়ে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন ৷ বৈঠকে বিচারক হাজী মোজাম্মেল হক ভুয়া চিকিত্সককে উদ্দেশ্যে করে বলেন, তুমি কিভাবে সার্জারী অপারেশন করলে ৷ সুঁই ভিতরে রেখে কেন তুমি সেলাই করে তাদের বিদায় দিলে ৷ অতঃপর ভুয়া চিকিত্সককে ৬ হাজার টাকা রোগীর পরিবারকে প্রদানের সিদ্ধান্ত দেন ৷

রোগীর বড় ভাই সবুজ জানান, রংপুরে আমাদের চিকিত্সা করাতে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে ৷ বিচারকরা কি করে একজন ভুয়া চিকিত্সকে মাত্র ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন ৷

উল্লেখ্য, সৈয়দপুর শহরের পাঁচমাথা মোড় কলাহাটির সালাম মার্কেটের ডাঃ মাসুম চিকিত্সালয়ে ভুয়া ডাক্তার মোঃ ফিরোজ আলম দীর্ঘদিন থেকে চিকিত্সা দিয়ে আসছেন ৷ সার্জারী বিশেষজ্ঞ না হয়েও অনেক রোগীর ভুল অপারেশনে করছেন ৷

অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন থেকে সার্জারী বিশেষজ্ঞ না হয়েও অপারেশন করছেন ৷ ডাঃ মাসুম চিকিত্সালয় থেকে মোঃ ফিরোজ আলমের ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে দেখা যায় কার্ডে তিনি নিজেকে মানবাধিকার কর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন ৷ কোন ধরণের চিকিত্সা শাস্ত্রের ডিগ্রী ও রেজিেষ্ট্রশনের উল্লেখ করেন নাই ৷ পরবর্তীতে মোবাইলের মাধ্যমে ভুয়া ডাক্তার মোঃ ফিরোজ আলমের কাছে চিকিত্সা বিষয়ে কোথায় পড়াশোনা করেছেন? জানতে চাইলে তিনি তাত্ক্ষণিক প্রতিষ্ঠানের নামও বলতে পারেননি ৷ প্রশাসন এই ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে অনেকেই মন্তব্য করেন ৷

আরও খবর

Sponsered content